ব্লগারের দুটি প্রশ্ন
ঈদের নামাজ পড়িয়ে বের হয়েছি। মনে হলো গেটের অদূরে দুটি ছেলে তর্ক জুড়ে দিয়েছে। দেখেও না দেখার ভান করে চলে এলাম। কারণ, শুধু জুমা আর ঈদের নামাজ পড়াই- যে কারণে মুসল্লিদের সঙ্গে সম্পর্ক অতো গভীর না। গভীর সম্পর্ক হাতেগোণা কয়েকজনের সঙ্গে। তাছাড়া মুহাম্মদপুর আসার তাড়া ছিলো। তর্কে লিপ্ত ছেলে দুটিকে চিনি। একজন মহল্লার ছেলে। আমার সঙ্গে খুব যোগাযোগ রাখে। মাঝে-মধ্যেই বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়। অন্যজন এখানে মাঝে মাঝে বেড়াতে আসে। নিজেকে খানিকটা প্রগতিশীল জ্ঞান করে। ধর্মীয় নানা বিষয় নিয়ে তর্ককরা তার দৈনন্দিন কাজের অংশ। শুনেছি নেট-ব্লগে লেখালেখি করে। হাঁটতে হাঁটতে বাসার সামনে চলে এসেছি, পেছন থেকে মহল্লার ছেলেটি দৌড়ে হাজির হলো। হুজুর! একটি বিষয় একটু জানা দরকার। আমি আমার ব্যস্ততার প্রসঙ্গ উল্লেখকরে স্থানীয় এক মাওলানা সাহেবের কথা বললাম- তার সঙ্গে কথা বলুন। বিকেলবেলা মহল্লার ছেলেটি ফোন করে জিজ্ঞেস করলো- আমি বাসায় কি না। বুঝলাম ঝামেলা মেটেনি। বললাম, আসতে রাত হবে। আমি এসে আপনাকে ফোন দেব। রাত্রে বাসায় পৌঁছে ফোন দিলাম। মিনিট দশেকের মধ্যে ওই দুইজনের সঙ্গে মাওলানা সাহেবও আসলেন। কী ব্যাপার, জানতে চাইলে মাওলানা সাহেব বললেন, এই ভাই নেট-ব্লগে লেখালেখি করেন, দুটি প্রশ্ন আছে তার। এক. হাজার হাজার প্রাণী হত্যার মধ্যে কুরবানির (আত্মত্যাগ) কী আছে? দুই. ইবরাহিম আ. তো মানুষ কুরবানি করেছিলেন। আমরা কেনো পশু কুরবানি করছি?
আমি একটু হাসলাম। তাকে প্রশ্ন করলাম, নেটে লেখালেখি করেন না নেট দেখাদেখি করেন? একটু মাথা চুলকিয়ে বললো, ঠিক লেখালেখি বলা যায় না, দেখাদেখিই বলতে পারেন। তাহলেতো প্রশ্ন দুটি আপনার নয়, আপনার গুরু রাজিব-আসিফদের। যাহোক আপনার আপত্তি যদি হয় প্রাণী হত্যার ব্যাপারে, তাহলে এই আপত্তি শুধু কুরবানির বেলায় কেন? মাছ, হাস, মুরগি, পাখি এমনকি উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে- অতএব শাকসবজি সবকিছুতেই তো আপত্তি হওয়ার কথা। প্রতিদিন হাটে-বাজারে হাজার হাজার গরু-ছাগল জবাই হচ্ছে, সেগুলো কি প্রাণী হত্যা নয়? এগুলো নিয়ে আপনারা লেখালেখি করেন না কেন? আপনাদের সব আপত্তি আল্লাহর বিধানের বেলায়। কেন? এগুলো নিয়ে খোচাখুচি করতে শয়তান খুব উৎসাহ যোগায় তাই না? এখানে আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশ পায়- এজন্যই কি আপনাদের এতো মাথাব্যথা?
দ্বিতীয় ব্যাপারটি হচ্ছে, ইবরাহিম আ. উত্তম সৃষ্টি মানুষ কুরবানির ব্যাপারে আদিষ্ট হয়েছিলেন বটে, কিন্তু জান্নাতি পশু কুরবানির মাধ্যমেই তার সমাপ্তি হয়েছিল। সম্ভবত মানুষ কালে কালে আল্লাহর আনুগত্যের প্রশ্নে পশুদের নিচে নেমে যাবে- এ কারণে পরবর্তীদের জন্য সরাসরি পশু কুরবানির আদেশ এসেছে। বর্তমান নেট-ব্লগ সংশ্লিষ্ট একশ্রেণির মানুষ গরু-গাধা থেকেও অধম। যেহেতু কুরবানির মূল কথাই হলো তাকওয়া বা খোদাভীতি। বর্তমান গরু-ছাগলের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ খোদাভীতি বিদ্যমান থাকলেও মানুষের মধ্যে নেই। তাই গরু-ছাগল দ্বারা কুরবানি সহিহ হলেও মানুষ নামের এসকল গরু-গাধা-ছাগল দ্বারা কুরবানি বিশুদ্ধ হতো না- বিধায় পশু কুরবানির আদেশ দেওয়া হয়েছে।
লোকটি আমার মুখের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিরবে প্রস্থান করলো। সাঈদ হাসানকেরাণীগঞ্জ, ঢাকা
ঈদের নামাজ পড়িয়ে বের হয়েছি। মনে হলো গেটের অদূরে দুটি ছেলে তর্ক জুড়ে দিয়েছে। দেখেও না দেখার ভান করে চলে এলাম। কারণ, শুধু জুমা আর ঈদের নামাজ পড়াই- যে কারণে মুসল্লিদের সঙ্গে সম্পর্ক অতো গভীর না। গভীর সম্পর্ক হাতেগোণা কয়েকজনের সঙ্গে। তাছাড়া মুহাম্মদপুর আসার তাড়া ছিলো। তর্কে লিপ্ত ছেলে দুটিকে চিনি। একজন মহল্লার ছেলে। আমার সঙ্গে খুব যোগাযোগ রাখে। মাঝে-মধ্যেই বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়। অন্যজন এখানে মাঝে মাঝে বেড়াতে আসে। নিজেকে খানিকটা প্রগতিশীল জ্ঞান করে। ধর্মীয় নানা বিষয় নিয়ে তর্ককরা তার দৈনন্দিন কাজের অংশ। শুনেছি নেট-ব্লগে লেখালেখি করে। হাঁটতে হাঁটতে বাসার সামনে চলে এসেছি, পেছন থেকে মহল্লার ছেলেটি দৌড়ে হাজির হলো। হুজুর! একটি বিষয় একটু জানা দরকার। আমি আমার ব্যস্ততার প্রসঙ্গ উল্লেখকরে স্থানীয় এক মাওলানা সাহেবের কথা বললাম- তার সঙ্গে কথা বলুন। বিকেলবেলা মহল্লার ছেলেটি ফোন করে জিজ্ঞেস করলো- আমি বাসায় কি না। বুঝলাম ঝামেলা মেটেনি। বললাম, আসতে রাত হবে। আমি এসে আপনাকে ফোন দেব। রাত্রে বাসায় পৌঁছে ফোন দিলাম। মিনিট দশেকের মধ্যে ওই দুইজনের সঙ্গে মাওলানা সাহেবও আসলেন। কী ব্যাপার, জানতে চাইলে মাওলানা সাহেব বললেন, এই ভাই নেট-ব্লগে লেখালেখি করেন, দুটি প্রশ্ন আছে তার। এক. হাজার হাজার প্রাণী হত্যার মধ্যে কুরবানির (আত্মত্যাগ) কী আছে? দুই. ইবরাহিম আ. তো মানুষ কুরবানি করেছিলেন। আমরা কেনো পশু কুরবানি করছি?
আমি একটু হাসলাম। তাকে প্রশ্ন করলাম, নেটে লেখালেখি করেন না নেট দেখাদেখি করেন? একটু মাথা চুলকিয়ে বললো, ঠিক লেখালেখি বলা যায় না, দেখাদেখিই বলতে পারেন। তাহলেতো প্রশ্ন দুটি আপনার নয়, আপনার গুরু রাজিব-আসিফদের। যাহোক আপনার আপত্তি যদি হয় প্রাণী হত্যার ব্যাপারে, তাহলে এই আপত্তি শুধু কুরবানির বেলায় কেন? মাছ, হাস, মুরগি, পাখি এমনকি উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে- অতএব শাকসবজি সবকিছুতেই তো আপত্তি হওয়ার কথা। প্রতিদিন হাটে-বাজারে হাজার হাজার গরু-ছাগল জবাই হচ্ছে, সেগুলো কি প্রাণী হত্যা নয়? এগুলো নিয়ে আপনারা লেখালেখি করেন না কেন? আপনাদের সব আপত্তি আল্লাহর বিধানের বেলায়। কেন? এগুলো নিয়ে খোচাখুচি করতে শয়তান খুব উৎসাহ যোগায় তাই না? এখানে আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশ পায়- এজন্যই কি আপনাদের এতো মাথাব্যথা?
দ্বিতীয় ব্যাপারটি হচ্ছে, ইবরাহিম আ. উত্তম সৃষ্টি মানুষ কুরবানির ব্যাপারে আদিষ্ট হয়েছিলেন বটে, কিন্তু জান্নাতি পশু কুরবানির মাধ্যমেই তার সমাপ্তি হয়েছিল। সম্ভবত মানুষ কালে কালে আল্লাহর আনুগত্যের প্রশ্নে পশুদের নিচে নেমে যাবে- এ কারণে পরবর্তীদের জন্য সরাসরি পশু কুরবানির আদেশ এসেছে। বর্তমান নেট-ব্লগ সংশ্লিষ্ট একশ্রেণির মানুষ গরু-গাধা থেকেও অধম। যেহেতু কুরবানির মূল কথাই হলো তাকওয়া বা খোদাভীতি। বর্তমান গরু-ছাগলের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ খোদাভীতি বিদ্যমান থাকলেও মানুষের মধ্যে নেই। তাই গরু-ছাগল দ্বারা কুরবানি সহিহ হলেও মানুষ নামের এসকল গরু-গাধা-ছাগল দ্বারা কুরবানি বিশুদ্ধ হতো না- বিধায় পশু কুরবানির আদেশ দেওয়া হয়েছে।
লোকটি আমার মুখের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিরবে প্রস্থান করলো। সাঈদ হাসানকেরাণীগঞ্জ, ঢাকা
প্রেমিক হও মানবের
‘পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি এ জীবন মন সকলি দাও তার মত সুখ কোথাও কি আছে আপনার কথা ভুলিয়া যাও।’ কবি তার পঙক্তিতে এক অনাবিল ঐশ্বরিক ম্যাসেজ দিয়ে গেছেন। ভুপেন হাজারিকার কালজয়ী সেই গানের কলিটি কার না হৃদয় কেড়েছে! ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য; একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না? হ্যাঁ, মানবিক সহজাত গুণাবলীর মধ্যে অন্যের ব্যথায় সমব্যথী হওয়া এবং পরের বিপদে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা একটি মহৎ গুণ। হিতৈষী মনোভাব ও সহমর্মিতার গুণ ছাড়া মানবিকতা ও মহানুভবতার বিকাশ পূর্ণতা পায় না। এই মহত ও সুন্দর গুণটি যার মধ্যে বিদ্যমান, তিনি সমাজ তথা রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে উত্তম কাজের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন। তাই ইসলামসহ অপরাপর সব ধর্মেই একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতাকে সর্বোত্তম কাজ বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং মানবতার মঙ্গল সাধনে এই গুণটির গুরুত্ব অত্যাধিক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মানবসেবা ও সমাজকল্যাণে ইসলামের অতি আগ্রহ এবং অনন্ত প্রেরণার স্বাক্ষর হিসেবে আর কিছু নয় কেবল নিম্নোক্ত হাদিসে কুদসিই যথেষ্ট হতে পারে। আবু হুরায়রা রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, কেয়ামত দিবসে নিশ্চয় আল্লাহ তাআ’লা বলবেন, ‘হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার শুশ্রƒষা করোনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক। আপনি তো বিশ্বপালনকর্তা; কিভাবে আমি আপনার শুশ্রƒষা করবো?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, অথচ তাকে তুমি দেখতে যাওনি। যদি তুমি তার শুশ্রƒষা করতে তবে তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে?’ ‘হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে আহার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে আহার করাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব, তুমি হলে বিশ্ব পালনকর্তা, তোমাকে আমি কিভাবে আহার করাবো?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জান না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি খাদ্য দাওনি। তুমি যদি তাকে আহার করাতে তবে আজ তা প্রাপ্ত হতে?’ ‘হে আদম সন্তান, তোমার কাছে আমি পানীয় চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে পানীয় দাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রভু, তুমি তো রাব্বুল আলামীন তোমাকে আমি কিভাবে পান করাবো?’ তিনি বলবেন, ‘তোমার কাছে আমার অমুক বান্দা পানি চেয়েছিল কিন্তু তাকে তুমি পান করাওনি। তাকে যদি পান করাতে তবে নিশ্চয় আজ তা প্রাপ্ত হতে।’ (মুসলিম : ৬৭২১; সহিহ ইবনে হিব্বান : ৭৩৬) পৃথিবীতে যত কল্যাণমূলক কাজ আছে তার মধ্যে সর্বাগ্রে স্থান পায় পরোপকার। আর তা জানা থাকা প্রয়োজন যে, সব উপকার করতে গিয়ে যেন আবার অহংকার পেয়ে না বসে। সংগোপনে উপকার করাকেই বলা হয় পর-উপকার। অনেকই নাম বা খ্যাতি অর্জনের জন্য কাউকে কিছু দান করেন এবং পরে তা ফলাও করে প্রচার করেন টিভি বা পত্রিকায়। তাকে পরোপকার বলে না। নিঃস্বার্থভাবেই পরোপকারে ব্রত হতে হবে, আর তখনই তা থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যাবে। অন্যের হক নষ্ট করে কিংবা কাউকে প্রতারণা করে অথবা অবৈধ ভাবে কাউকে উপকার করলে তাও সওয়াবের আওতায় আসবে না। এক কথায় আল্লাহর পূর্ণ নৈকট্য লাভ করতে হলে বাগাড়ম্বর না করেই অন্যের উপকার করতে হবে। উপকার করে উপকারকারীকে খোটা দেওয়া যাবে না। আমরা বর্তমানে এমন একটি সমাজে বাস করছি যেখানে আজ পরোপকারী হওয়া দরকার। আমাদের অসহিষ্ণু আচরণে এবং কল্যাণমূলক কাজ থেকে বিরত থাকায় সামাজিকভাবে মর্যাদা হারাতে বসেছি। অথচ রাসুলের আদর্শ কী ছিল? ইসলামে একে অপরের প্রতি সহানুভূতি অর্থাৎ পরোপকারের বহু উল্লেখযোগ্য নজির রয়েছে। আমরা হজরত ওমর রা.-এর কথা অনেকেই জানি। তিনি ছিলেন বিশাল সাম্রাজ্যের খলিফা। তিনিও অতি সহজ-সরলভাবে জীবন নির্বাহ করতেন। সাধারণ মানুষের প্রতি তাঁর ছিল অতি মহানুভব-পরোপকারী হৃদয়। এক রাতে তিনি নগরীর শহরতলির আশপাশে ঘুরে যখন একটি ক্ষুধার্ত পরিবারের শূন্য হাঁড়িত পানি জ্বাল দেওয়ার দৃশ্য অবলোকন করলেন তখনই হজরত ওমর রা. ছুটে যান সরকারি গুদামে, সেখান থেকে তিনি বয়ে নিয়ে এলেন আটার বস্তা। গৃহকর্ত্রী খলিফার এমন দয়া ও সহানুভূতি দেখে হতভম্ব হয়ে পড়েন। পরোপকারের এই অপূর্ব ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। অতএব, পরোপকারের মতো একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতার গুণটি যদি আমরা অনুশীলন করি তবে আমাদের সমাজের উঁচু-নিচু ভেদাভেদ থাকবে না, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধিতে আমূল শান্তিময় পরিবেশ ফিরে আসবে সন্দেহ নেই। শুধু তাই নয়, এতে রয়েছে আত্মিক তৃপ্তি। আমাদের মহানবী সা. বলেছেন, যে প্রতিবেশীকে উপোস রেখে পেটপুরে খায় সে মুমিন নয়। আসুন, আমরা যেন মানবিক কল্যাণে-মঙ্গলে একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল, সহমর্মিতা এবং সমবেদনায় একাত্ম হয়ে সমাজ সংসারে স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারি। দেশের সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধিকরণে যেন ধর্মীয় মূল্যবোধকে নিজেদের জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি। কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক চট্টগ্রাম |
ফুলিদের ঈদ
পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য মুহাম্মাদপুর-আটিবাজার যাতায়াত আমার প্রাত্যহিক রুটিনের অংশ। গাড়ির জন্য অপেক্ষা, গাড়িতে জায়গা নিতে ছোটাছুটি দৌড়াদৌড়ি অনেকটা গা সওয়া হয়ে গেছে। প্রথম প্রথম খুব খারাপ লাগতো। বয়স্কজন-নারী-শিশু দাঁড়িয়ে আছে, আর আমি প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে গাড়িতে উঠে পড়লাম- বিষয়টি মন খারাপের মতোই। পরে বুঝেছি এটিই নিয়ম। যাহোক ঈদেরদিন ভিড় কম। দৌড়াদৌড়ি করতে হলো না। যে কারণে কিছুটা আনন্দবোধ করছিলাম। বছিলাব্রীজ পার হওয়ার পর একটি দৃশ্য সে আনন্দটুকু কেড়ে নিলো। ফুলের মতো একটি মেয়ে ও তার মা উর্দ্ধশ্বাসে দৌড়াচ্ছে। মেয়েটির বয়স কিছুতেই চার বছরের বেশি হবে না। আমাদের সমাজব্যবস্থার নির্মমতায় মেয়েটি ফুলের পরিবর্তে বনফুলের রূপ ধারণ করেছে। কারণ সমাজের ফুলদানিতে সে স্থান পায়নি। মা উর্দ্ধশ্বাসে ছুটছে। মেয়েটি জীবনপণ দৌড়িয়েও মায়ের সঙ্গে তাল মিলাতে পারছে না। মায়ের কোলে আরও একটি ছোট্ট কলি। সেও কিছুদিন পর বনফুলই হবে। মা পেছন ফিরে মেয়েকে তাগাদা দিলো। কিন্তু ফুলির চলার গতি বাড়লো বলে মনে হলো না। ঠাশকরে চড় লাগিয়ে দিলো ছোট্ট ফুলটির মুখে। কারণ গোস্তের জন্য মাকে আরও অনেকের দুয়ারে ধর্ণা দিতে হবে। তাই ছোট্ট ফুলির প্রতি তার যতো ক্ষোভ। গাড়ির কেউ কেউ দৃশ্যটি দেখে মনে হলো খুব আনন্দ পেয়েছে। তাদের হাসি এবং মন্তব্য শুনে তা বোঝা গেলো। আমি কিছুতেই বুঝলাম না এখানে হাসার বা আনন্দের কী হলো। ইচ্ছে হলো লোকগুলোর মুখে থাপ্পড় মারি। ঈদের দিন ঝামেলায় জড়াতে মন সায় দিলো না। কোনো তর্কেও গেলাম না। চুপচাপ বসে রইলাম। ভাবছিলাম, এসমাজে ফুলিদের মুখে বছরে একবারই একটু তৃপ্তিমতো গোস্ত ওঠে। একারণেই ফুলির মা-দের এই নিরন্তর ছুটে চলা। হায়! সেদিন কবে আসবে যখন সমাজের বিত্তবানরা ফুলিদের ঘরে একটু গোস্ত পৌঁছে দেওয়াকে নিজেদের দায়িত্ব মনে করবে। এসমাজের যে সব জ্ঞানপাপিরা কুরবানিকে অহেতুক বলতে চায়, তাদের কবে বোধোদয় হবে যে, কুরবানির কারণেই বছরে অন্তত একবার হলেও ফুলিদের ঘরে একটু গোসত পৌঁছে থাকে। এরপর থেকে ওই স্থানটি অতিক্রমকালে দৃশ্যটি মাঝেমধ্যেই মনের পর্দায় ভেসে ওঠে। ভাবি, কবে আমাদের ভাগ্যে জুটবে খলিফা উমরের মতো একজন মানবতাবাদি শাসক। যে ফুলিদের ব্যথা বুঝবে। রাতের আধাঁরেও ফুলিদের খবর নিতে উদগ্রীব থাকবে। সাজিদ হাসান আটিবাজার, ঢাকা |