কন্যা সন্তান জন্মে অসন্তুষ্টি একটি জাহেলি চেতনা
মাওলানা আবু সায়েম
সেদিন আমার এক পরিচিত জনের সন্তান হলো। সংবাদটা স্বাভাবিকভাবেই বেশ আনন্দের। আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব সকলের মুখেই হাসি। সদ্যপ্রসূত সন্তানটির জন্য সকলেই বিভিন্নভাবে আশীর্বাদ ও দুআ করছেন। আমিও বেশ আনন্দিতই ছিলাম। কিন্তু কিছুটা সময় পর জানতে পারলাম কন্যা সন্তান জন্ম লাভ করায় ভদ্রলোক তেমন খুশি নন। সন্তানটি তার প্রথম সন্তান। তার মনের প্রত্যাশা ছিল পুত্র সন্তানের। তার প্রত্যাশাটি এমন কেন ছিল তা আমার জানা নেই।
এটি ছিল এক ভদ্রলোকের ঘটনা আরেকটি ঘটনা একজন মাওলানা(?) সাহেবের। তার ২য় সন্তান কন্যা হলে তিনি খুবই মনক্ষুন্ন হলেন। এমনকি বন্ধু-বান্ধবদের সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সংবাদটি পর্যন্ত জানাতে সংকোচবোধ করলেন।
কন্যা সন্তানের স্বজাতীয় আমার এক নারী আত্মীয়ের কথা বলি। গ্রামের কারো পুত্র সন্তান হলে তিনি তাকে দেখতে ছুটে যান এবং খোঁজ-খবর নিতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। অথচ তার আত্মীয়ের ঘরেও যদি কোনো কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় তাহলে তিনি মোটেও উচ্ছ্বাসিত হন না। বরং মেয়ে হয়েছে বলেই নাক ছিটকাতে থাকেন।
আমরা আজ যে সমাজে বাস করছি সে সমাজেরই কিছু চিত্র এগুলো। নারী স্বাধীনতা ও নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণ ইত্যাদি বিষয়ক সংগঠন-সংস্থার অভাব নেই। এতো কিছু করেও এ ঘৃণিত চেতনাটিকেও আমরা পরিবর্তন করতে সক্ষম হইনি। এটি আমাদেরই ব্যর্থতা স্বীকার করতেই হবে। এর পিছনে গোড়াতেই রয়েছে আমাদের গলতি। সেটি হচ্ছে ইসলামি শিক্ষা ও মূল্যবোধ থেকে দূরে সরে যাওয়া বা জানলেও তা উপলব্ধি না করা।
আজ থেকে চৌদ্দশত বছর পূর্বে রাসুলে আমীন সা. যে চেতনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন, যে চেতনা এক সময় আরব সমাজকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল, ঠিক সে চেতনাই আজ আমাদের সমাজকে ঘিরে ধরেছে। সে চেতনা প্রেতাত্মা আজও আমাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। যার অনিবার্য ফলাফল আমাদের সমাজের আজকের এই চিত্র। এ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় নৈতিকতা, ইসলামি মূল্যবোধ ও শিক্ষায় নিজে আলোকিত হওয়া এবং সমাজকে আলোকিত করা।
কন্যা সন্তানের পর পুত্র সন্তান বা পুত্র সন্তানের পর কন্যা সন্তান কামনা করা একটি স্বাভাবিক প্রবণতা। কিন্তু মৌলিকভাবে পুত্র সন্তানই কামনা করা এবং পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়াকে মর্যাদার বিষয় বলে জ্ঞান করা আর কন্যা সন্তান হওয়ায় মনক্ষুন্ন হওয়া অবশ্যই জাহেলি চেতনা। আল্লাহ তায়ালা জাহেলি যুগের সেই অন্যায় চেতনার চিত্রায়ন করেছেন এভাবে ‘যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার চেহারা মলিন হয়ে যায় এবং যে মনে মনে দুঃখ-ক্লিষ্ট হয়। সে এ সুসংবাদকে খারাপ মনে করে মানুষ থেকে লুকিয়ে বেড়ায় এবং চিন্তা করে হীনতা স্বীকার করে তাকে নিজের কাছে রেখে দেবে, নাকি তাকে মাটিতে পুতে ফেলবে। লক্ষ করো, সে কতো নিকৃষ্ট সিদ্ধান্ত স্থির করে ছিল।’ [সূরা নাহল: ৫৮-৫৯]
পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে যদিও কন্যা সন্তানকে জ্যান্ত পুতে ফেলার মত পরিস্থিতি আমাদের সমাজে নেই। কিন্তু এ ছাড়া বাকি চেতনাটুকুর চিত্র আমাদের সমাজের শিরায় শিরায় এখনো বহমান। অথচ আল্লাহ তায়ালা প্রথম কন্যা সন্তান হওয়াকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। যাকে খুশি কন্যা দান করেন, যাকে খুশি পুত্র দান করেন। আর যাকে ইচ্ছা করেন তাকে পুত্র-কন্যা উভয়ই দান করেন। আবার তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে নি:সন্তানও রাখেন। নিশ্চয় তিনি জ্ঞানের মালিক, শক্তির আধার। [সূরা শুরা: ৪৯-৫০]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে কাসির রহ. বলেন, আল্লাহ তায়ালা উক্ত আয়াতে মানুষকে চার ভাগে বিভক্ত করেছেন। ১. কাউকে শুধু কন্যা সন্তান দেন ২. কাউকে শুধু পুত্র সন্তান দেন ৩. কাউকে পুত্র ও কন্যা উভয় দেন ৪. কাউকে কন্যা-পুত্র কোনো কিছুই দেন না। বরং বন্ধ্যা করে রাখেন। [তাফসিরে ইবনে কাসির: ৭/২১৬]
আল্লাহ তায়ালা এ চার প্রকার মানুষের মধ্যে কন্যা সন্তান দেওয়ার প্রকারটি প্রথমে উল্লেখ করেছেন। এর মাধ্যমে প্রথম কন্যা সন্তান হওয়াকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এ সূত্র থেকেই রাসুল সা. প্রথম কন্যা সন্তান হওয়াকে সৌভাগ্য ও বরকতের প্রতীক বলে আখ্যা দিয়েছেন।
হযরত ওয়াসিলা বিন আসকা রা. বলেন, রাসুল সা. ইরশাদ করেছেন: ‘কোন নারী প্রথম কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়া বরকত ও সৌভাগ্যের বিষয়। তুমি কি শুননি আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তিনি যাকে চান কন্যা দেন এবং যাকে চান পুত্র’ এ আয়াতে তিনি কন্যার কথা পুত্রের আগে বলেছেন? [তাফসিরে কুরতুবি: ১৬/৪৮, তারিখে বাগদাদ: ৪৮৩৫,)
এ হাদিস দ্বারা এ বিষয়টিই প্রমাণিত হয় যে, প্রথম কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া সৌভাগ্য ও বরকতের কারণ। অথচ এটাকেই আমরা অমর্যাদা ও সম্মাহানী ভাবছি।
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম রাজি রহ. বলেন, নারীজাতি যেহেতু সৃষ্টিগতভাবেই দুর্বল তাই তার কথা আগে উল্লেখ করে বুঝানো হয়েছে যে, যার কন্যা সন্তান আগে হবে সে আল্লাহর রহমত ও দয়া দ্রুত লাভ করবে। [তাফসিরে কাবির: ২৭/৬০৯]
হযরত আয়েশা রা. বলেন রাসুল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি তিনজন কন্যা সন্তানদের প্রতিপালন করবে এবং তাদের সাথে সদাচরণ করবে আল্লাহ তাকে এর বিনিময়ে দোযখ থেকে মুক্তি দিবেন। [সহিহ বুখারি: ৫৯৯৫]
এ হাদিসের অপর এক বর্ণনায় এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলো, কন্যা সন্তান যদি দুটি হয় তাহলেও কি এ পুরস্কার? রাসুল সা. বললেন, দুটি হলেও। সে বললো, কন্যা সন্তান একটি হলেও কি এ পুরস্কার? রাসুল সা. বললেন হ্যাঁ একটি হলেও। [মুসনাদে আহমাদ: ৮৪২৫]
একজন মুমিনের জন্য এর চেয়ে বেশি পাওয়া আর কি হতে পারে। এটিই তো তার চূড়ান্ত সফলতা। আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘আর যাকে দোজখ থেকে দূরে রাখা হলো এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হলো সেই তো সফল’। [সুরা আল ইমরান: ১৮৫]
পুত্র সন্তান লাভ করার কামনা কখনো হয়তো এ ধরনা থেকেও তাড়িত হতে পারে যে, ভবিষ্যতে বার্ধক্য অবস্থায় পুত্র সন্তানই তো ভরণপোষণ দিবে। সেই তো আমাকে আমার দুঃসময়ে সহযোগিতা করবে। যদি কারো এ ধারনা থাকে তাহলে জেনে রাখুন এটি শিরকি চিন্তা। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী এমন কোনও প্রাণী নেই, যার রিজিক আল্লাহ নিজ দায়িত্বে রাখেননি। [সূরা হুদ: ৬]
এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা রিজিকের দায়িত্ব নিজের ওপর নিয়েছেন। তাই রিজিকের ব্যাপারে অন্যের ওপর আস্থা রাখা শিরকি বিশ্বাস। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আমিন।
মাওলানা আবু সায়েম
সেদিন আমার এক পরিচিত জনের সন্তান হলো। সংবাদটা স্বাভাবিকভাবেই বেশ আনন্দের। আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব সকলের মুখেই হাসি। সদ্যপ্রসূত সন্তানটির জন্য সকলেই বিভিন্নভাবে আশীর্বাদ ও দুআ করছেন। আমিও বেশ আনন্দিতই ছিলাম। কিন্তু কিছুটা সময় পর জানতে পারলাম কন্যা সন্তান জন্ম লাভ করায় ভদ্রলোক তেমন খুশি নন। সন্তানটি তার প্রথম সন্তান। তার মনের প্রত্যাশা ছিল পুত্র সন্তানের। তার প্রত্যাশাটি এমন কেন ছিল তা আমার জানা নেই।
এটি ছিল এক ভদ্রলোকের ঘটনা আরেকটি ঘটনা একজন মাওলানা(?) সাহেবের। তার ২য় সন্তান কন্যা হলে তিনি খুবই মনক্ষুন্ন হলেন। এমনকি বন্ধু-বান্ধবদের সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সংবাদটি পর্যন্ত জানাতে সংকোচবোধ করলেন।
কন্যা সন্তানের স্বজাতীয় আমার এক নারী আত্মীয়ের কথা বলি। গ্রামের কারো পুত্র সন্তান হলে তিনি তাকে দেখতে ছুটে যান এবং খোঁজ-খবর নিতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। অথচ তার আত্মীয়ের ঘরেও যদি কোনো কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় তাহলে তিনি মোটেও উচ্ছ্বাসিত হন না। বরং মেয়ে হয়েছে বলেই নাক ছিটকাতে থাকেন।
আমরা আজ যে সমাজে বাস করছি সে সমাজেরই কিছু চিত্র এগুলো। নারী স্বাধীনতা ও নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণ ইত্যাদি বিষয়ক সংগঠন-সংস্থার অভাব নেই। এতো কিছু করেও এ ঘৃণিত চেতনাটিকেও আমরা পরিবর্তন করতে সক্ষম হইনি। এটি আমাদেরই ব্যর্থতা স্বীকার করতেই হবে। এর পিছনে গোড়াতেই রয়েছে আমাদের গলতি। সেটি হচ্ছে ইসলামি শিক্ষা ও মূল্যবোধ থেকে দূরে সরে যাওয়া বা জানলেও তা উপলব্ধি না করা।
আজ থেকে চৌদ্দশত বছর পূর্বে রাসুলে আমীন সা. যে চেতনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন, যে চেতনা এক সময় আরব সমাজকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল, ঠিক সে চেতনাই আজ আমাদের সমাজকে ঘিরে ধরেছে। সে চেতনা প্রেতাত্মা আজও আমাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। যার অনিবার্য ফলাফল আমাদের সমাজের আজকের এই চিত্র। এ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় নৈতিকতা, ইসলামি মূল্যবোধ ও শিক্ষায় নিজে আলোকিত হওয়া এবং সমাজকে আলোকিত করা।
কন্যা সন্তানের পর পুত্র সন্তান বা পুত্র সন্তানের পর কন্যা সন্তান কামনা করা একটি স্বাভাবিক প্রবণতা। কিন্তু মৌলিকভাবে পুত্র সন্তানই কামনা করা এবং পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়াকে মর্যাদার বিষয় বলে জ্ঞান করা আর কন্যা সন্তান হওয়ায় মনক্ষুন্ন হওয়া অবশ্যই জাহেলি চেতনা। আল্লাহ তায়ালা জাহেলি যুগের সেই অন্যায় চেতনার চিত্রায়ন করেছেন এভাবে ‘যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার চেহারা মলিন হয়ে যায় এবং যে মনে মনে দুঃখ-ক্লিষ্ট হয়। সে এ সুসংবাদকে খারাপ মনে করে মানুষ থেকে লুকিয়ে বেড়ায় এবং চিন্তা করে হীনতা স্বীকার করে তাকে নিজের কাছে রেখে দেবে, নাকি তাকে মাটিতে পুতে ফেলবে। লক্ষ করো, সে কতো নিকৃষ্ট সিদ্ধান্ত স্থির করে ছিল।’ [সূরা নাহল: ৫৮-৫৯]
পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে যদিও কন্যা সন্তানকে জ্যান্ত পুতে ফেলার মত পরিস্থিতি আমাদের সমাজে নেই। কিন্তু এ ছাড়া বাকি চেতনাটুকুর চিত্র আমাদের সমাজের শিরায় শিরায় এখনো বহমান। অথচ আল্লাহ তায়ালা প্রথম কন্যা সন্তান হওয়াকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। যাকে খুশি কন্যা দান করেন, যাকে খুশি পুত্র দান করেন। আর যাকে ইচ্ছা করেন তাকে পুত্র-কন্যা উভয়ই দান করেন। আবার তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে নি:সন্তানও রাখেন। নিশ্চয় তিনি জ্ঞানের মালিক, শক্তির আধার। [সূরা শুরা: ৪৯-৫০]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে কাসির রহ. বলেন, আল্লাহ তায়ালা উক্ত আয়াতে মানুষকে চার ভাগে বিভক্ত করেছেন। ১. কাউকে শুধু কন্যা সন্তান দেন ২. কাউকে শুধু পুত্র সন্তান দেন ৩. কাউকে পুত্র ও কন্যা উভয় দেন ৪. কাউকে কন্যা-পুত্র কোনো কিছুই দেন না। বরং বন্ধ্যা করে রাখেন। [তাফসিরে ইবনে কাসির: ৭/২১৬]
আল্লাহ তায়ালা এ চার প্রকার মানুষের মধ্যে কন্যা সন্তান দেওয়ার প্রকারটি প্রথমে উল্লেখ করেছেন। এর মাধ্যমে প্রথম কন্যা সন্তান হওয়াকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এ সূত্র থেকেই রাসুল সা. প্রথম কন্যা সন্তান হওয়াকে সৌভাগ্য ও বরকতের প্রতীক বলে আখ্যা দিয়েছেন।
হযরত ওয়াসিলা বিন আসকা রা. বলেন, রাসুল সা. ইরশাদ করেছেন: ‘কোন নারী প্রথম কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়া বরকত ও সৌভাগ্যের বিষয়। তুমি কি শুননি আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তিনি যাকে চান কন্যা দেন এবং যাকে চান পুত্র’ এ আয়াতে তিনি কন্যার কথা পুত্রের আগে বলেছেন? [তাফসিরে কুরতুবি: ১৬/৪৮, তারিখে বাগদাদ: ৪৮৩৫,)
এ হাদিস দ্বারা এ বিষয়টিই প্রমাণিত হয় যে, প্রথম কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া সৌভাগ্য ও বরকতের কারণ। অথচ এটাকেই আমরা অমর্যাদা ও সম্মাহানী ভাবছি।
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম রাজি রহ. বলেন, নারীজাতি যেহেতু সৃষ্টিগতভাবেই দুর্বল তাই তার কথা আগে উল্লেখ করে বুঝানো হয়েছে যে, যার কন্যা সন্তান আগে হবে সে আল্লাহর রহমত ও দয়া দ্রুত লাভ করবে। [তাফসিরে কাবির: ২৭/৬০৯]
হযরত আয়েশা রা. বলেন রাসুল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি তিনজন কন্যা সন্তানদের প্রতিপালন করবে এবং তাদের সাথে সদাচরণ করবে আল্লাহ তাকে এর বিনিময়ে দোযখ থেকে মুক্তি দিবেন। [সহিহ বুখারি: ৫৯৯৫]
এ হাদিসের অপর এক বর্ণনায় এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলো, কন্যা সন্তান যদি দুটি হয় তাহলেও কি এ পুরস্কার? রাসুল সা. বললেন, দুটি হলেও। সে বললো, কন্যা সন্তান একটি হলেও কি এ পুরস্কার? রাসুল সা. বললেন হ্যাঁ একটি হলেও। [মুসনাদে আহমাদ: ৮৪২৫]
একজন মুমিনের জন্য এর চেয়ে বেশি পাওয়া আর কি হতে পারে। এটিই তো তার চূড়ান্ত সফলতা। আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘আর যাকে দোজখ থেকে দূরে রাখা হলো এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হলো সেই তো সফল’। [সুরা আল ইমরান: ১৮৫]
পুত্র সন্তান লাভ করার কামনা কখনো হয়তো এ ধরনা থেকেও তাড়িত হতে পারে যে, ভবিষ্যতে বার্ধক্য অবস্থায় পুত্র সন্তানই তো ভরণপোষণ দিবে। সেই তো আমাকে আমার দুঃসময়ে সহযোগিতা করবে। যদি কারো এ ধারনা থাকে তাহলে জেনে রাখুন এটি শিরকি চিন্তা। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী এমন কোনও প্রাণী নেই, যার রিজিক আল্লাহ নিজ দায়িত্বে রাখেননি। [সূরা হুদ: ৬]
এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা রিজিকের দায়িত্ব নিজের ওপর নিয়েছেন। তাই রিজিকের ব্যাপারে অন্যের ওপর আস্থা রাখা শিরকি বিশ্বাস। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আমিন।