জয়ের বক্তব্য প্রত্যাহার না হলে
ইসলামপ্রিয় জনতা আওয়ামী লীগকে লালকার্ড দেখাবে
মাওলানা মাহফুজুল হক
রাহমানী পয়গাম : কওমি মাদরাসাসমূহের ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ’ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ এবং বেফাকের তত্ত্বাবধানে দেশের অন্যান্য আঞ্চলিক বোর্ডগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘কওমি মাদরাসা সংরক্ষণ পরিষদ’ তা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ জোরদার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। সরকারি এই উদ্যোগের বিরোধিতা কেন করা হচ্ছে?
মাওলানা মাহফুজুল হক : কওমি মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ নামে সরকারের মেয়াদের একেবারে শেষসময়ে এসে ষড়যন্ত্রমূলক এই রিষয়টিকে সামনে আনা হয়েছে। আমারা মনে করি এই বিল পাস হলে দেশের ঈমান-আমলের অতন্দ্রপ্রহরী কওমি মাদরাসাগুলো পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। মূলত কওমি মাদরাসাকে ধ্বংস করার জন্যেই সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। কওমি মাদরাসার ঐতিহ্য ধ্বংস করে, সিলেবাস পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার বিনিময়ে সনদ লাভের প্রশ্নই আসে না। আমরা কওমি মাদরাসার ওপর সরকারের কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ ছাড়া শুধু সনদের সরকারি স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে আসছিলাম। কিন্তু সরকার এখন সংসদে যে বিল উত্থাপনের লক্ষে খসড়া তৈরি করেছে, তাতে কওমি মাদরাসাগুলোকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে সরকারের আজ্ঞাবহ করার সকল আয়োজন চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিতর্কিত এ বিলে প্রস্তাবিত ‘বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ’-এর চেয়ারম্যানসহ সব সদস্যই সরকার নিয়োগ দেবে। পরিচালনা কমিটি, প্রিন্সিপাল ইত্যাদি সরকার ইচ্ছেমতো বানাতে পারবে। ব্যবস্থাপনাও চলে যাবে কর্তৃপক্ষের হাতে। জনগণের সরাসরি সম্পৃক্ততা, ইচ্ছা ও আন্তরিকতায় পরিচালিত কওমি মাদরাসাগুলো সরকারের পছন্দ-অপছন্দের খেলনায় পরিণত হবে। ধর্মবিদ্বেষী এই কৌশল দেশের মানুষের আস্থা ও ভরসার এই জায়গাটিকে দুর্নীতি, ঘুষ, অনিয়ম, দলবাজি ইত্যাদি পুরোপুরি ধ্বংস করে দিবে।
রাহমানী পয়গাম : কিন্তু আপনারা তো কওমি মাদরাসা সনদের স্বীকৃতিসহ নানা দাবিতে দীর্ঘদিন থেকেই আন্দোলন করে আসছিলেন। যতোদূর জানি শুরুর দিকে বেফাক কর্তৃপক্ষও এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত ছিলো। তাহলে এখন বিরোধিতা করছেন কেন?
মাওলানা মাহফুজুল হক : আন্দোলন যে প্রয়োজনে করা হচ্ছিল, বিরোধিতা তার চেয়ে বড় প্রয়োজনে করা হচ্ছে। সনদের জন্য আন্দোলনের লক্ষ-উদ্দেশ্য ছিল আরও ব্যাপক জনগোষ্ঠীর নিকট এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিচিত করে তার গ্রহণযোগ্যতা ও সেবার পরিধি বিস্তৃত করা। কিন্তু সরকার কওমি সনদের স্বীকৃতির নামে শুরু থেকেই প্রতারণামূলক-রহস্যজনক আচরণ করে আসছে। আমাদের উত্থাপিত শর্ত পূরণ না করে এবং চেয়ারম্যানকে না জানিয়েই কমিশনের কতিপয় ব্যক্তিবর্গ বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু করে। ফলে নেতৃস্থানীয় ওলামা-মাশায়েখদের নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এই কমিশনকে প্রত্যাখ্যান করেন বেফাক সভাপতি, দেশের ওলামা সমাজের অভিভাবক আল্লামা শাহ আহমদ শফী দা. বা. সহ কমিশনের অধিকাংশ সদস্যগণ। আমরা চেয়েছিলাম শিক্ষার এই ধারাকে আরও গতিশীল করতে সরকারিভাবে স্বীকৃতির মতো ন্যূনতম সহযোগিতা। কওমি মাদরাসার ওপর সরকারের যে কোনো প্রকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া শুধু সনদের সরকারি স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে এসেছি। কিন্তু সরকার সংসদে বিল আকারে উত্থাপনের জন্য যে খসড়া তৈরি করেছে, তাতে কওমি মাদরাসাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে সরকারের আজ্ঞাবহ করার সকল আয়োজন চূড়ান্ত করা হয়েছে। ফলাফল এই দাঁড়িয়েছে, আরও ভালোভাবে কাজটি আঞ্জাম দেওয়ার অভিপ্রায়ে দীর্ঘ আন্দোলনের পর বর্তমান এই শিক্ষাব্যবস্থা গভীর খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে বিরাট সংকট । শুরু হয়েছে ভয়াবহ ষড়যন্ত্র। অনিবার্য কারণে এর বিরোধিতায় সর্বস্তরের ওলামায়ে কেরাম প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন, মাঠে নামতে বাধ্য হচ্ছেন। সরকার তার অবস্থান থেকে সরে না আসলে সামনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
রাহমানী পয়গাম : এই বিলটি পাশ হলে সবচেয়ে বড় ক্ষতি কী হবে বলে মনে করেন?
মাওলানা মাহফুজুল হক : ইসলামি শিক্ষার ঐতিহ্যবাহী প্রক্রিয়া কওমি মাদরাসা বাংলাদেশের মানুষকে ধর্মপ্রাণ ও মানবিক বানাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের সাড়ে চার লাখ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন লাখ লাখ খতিব, আলেম, মুফতি, মুহাদ্দিস, মুফাসসির, ইসলাম প্রচারক, গবেষক ও পীর-মাশায়েখ এসব মাদরাসা থেকেই তৈরি হয়। পবিত্র কুরআনের হাফেজ, ক্বারি ও মুয়াল্লিম তৈরিও এসব মাদরাসার অবদান। বিজ্ঞ আলেম ও খাঁটি ইসলামি ব্যক্তিত্ব তৈরির জন্য কওমি মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা অপরিহার্য। বিশেষজ্ঞ মুফতি মুহাদ্দিস তৈরির জন্যও এসব মাদরাসার বিকল্প নেই। কিন্তু সরকারের গৃহিত নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে কওমি মাদরাসার অতিত ঐতিহ্য যেমন হারিয়ে যাবে, তেমনি বাধাগ্রস্ত হবে চলমান ধারাও। তখন এগুলো গতানুগতিক সরকারের তল্পিবাহক প্রতিষ্ঠানে রূপ নেবে।
রাহমানী পয়গাম : দেশের অন্যান্য আঞ্চলিক বোর্ডগুলোর অবস্থান কী? তারা সরকারের সঙ্গে না বেফাকের সঙ্গে?
মাওলানা মাহফুজুল হক : বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক) ছাড়াও আঞ্চলিক কিছু বোর্ড রয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ দ্বারা স্পষ্ট হয়েছে যে, বেফাকের মতোই অন্যান্য আঞ্চলিক বোর্ডগুলোও চলমান এই ইস্যুতে বেফাকের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে।
গিত ২ সেপ্টেম্বর ঢাকার মালিবাগে অনুষ্ঠিত শীর্ষ দায়িত্বশীলদের বৈঠকে বেফাকের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও তানযীমুল মাদারিসিল কওমিয়ার প্রধান মুফতি আব্দুর রহমান, পটিয়া মাদরাসাকেন্দ্রিক বোর্ড ‘ইত্তিহাদুল মাদারিসিল কওমিয়া’র সভাপতি, আল্লামা সুলতান যওক নদভী, ওই বোর্ডের শীর্ষ দায়িত্বশীল, পটিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল আল্লামা আব্দুল হালীম বুখারী, সিলেট অঞ্চলের বোর্ড ‘আজাদ দ্বীনি এদারা’র শীর্ষ ব্যক্তিত্ব আল্লামা আব্দুল বাসেত বরকতপুরীসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামাদের উপস্থিতিতে কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও এই বোর্ডগুলোর বাইরে যে অল্প সংখ্যক মাদরাসা রয়েছে, তারাও সরকারের এই পদক্ষেপের সঙ্গে একমত নয়। এ হিসেবে বলা যায়Ñ দেশের প্রায় সকল কওমি মাদরাসা ও দায়িত্বশীলগণ এ ব্যাপারে সরকারবিরোধী অবস্থানে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।
রাহমানী পয়গাম : তাহলে সকল বোর্ডগুলোর পক্ষ থেকে সম্মিলিত কোনো কর্মসূচি দেওয়া হবে কি?
মাওলানা মাহফুজুল হক : হ্যাঁ, আমরা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি এবং সামনের দিনগুলোতে কীভাবে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি পালন করা যায়Ñ সে লক্ষেই সকল বোর্ডগুলোর সমন্বয়ে ‘কওমি মাদরাসা সংরক্ষণ পরিষদ’ গঠিত হয়েছে। শীর্ষ উলামাদের পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর বোর্ডগুলোর দায়িত্বশীলদের উপস্থিতিতে জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও কর্মসূচিও আসবে।
রাহমানী পয়গাম : সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে একটি কথা বারবার বলার চেষ্টা করা হচ্ছে যে, ‘কওমি শিক্ষাকর্তৃপক্ষ’ বিলটি মাদরাসা শিক্ষাকে আরও গতিশীল ও আধুনিক করার জন্য। আপনি কি এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত?
মাওলানা মাহফুজুল হক : পূর্বাপর ঘটনাপ্রবাহ সামনে রাখলে একথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, বর্তমান সরকার কর্তৃক প্রস্তুতকৃত এই বিলটি মোটেও কওমি মাদরাসার অনুকূলে নয়। আর সরকারের পক্ষ থেকে যে কথাটি বলার চেষ্টা করা হচ্ছেÑ তা নিছক একটি রাজনৈতিক বক্তব্য। আমরা জাতিকে এসব বক্তব্যে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ করছি।
রাহমানী পয়গাম : আপনি তো হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের সঙ্গেও সম্পৃক্ত। এই ইস্যুতে হেফাজতের কর্মসূচি কী?
মাওলানা মাহফুজুল হক : হেফাজতে ইসলাম যেহেতু কওমি ঘরনারই একটি অরাজনৈতিক সংগঠনÑ তাই কওমি মাদরাসার ভালো-মন্দ নিয়ে হেফাজতে ইসলাম সর্বদা তৎপর। এরই ফলশ্র“তিতে ইতোমধ্যে হেফাজতের পক্ষ থেকেও কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ২৫ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সেখানে একথাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, সরকার যদি আমাদরে যৌক্তিক দাবিগুলো বিবেচনায় না আনে তাহলে, আগামী দিনগুলোতে কঠিন থেকে কঠিন কর্মসূচি দেওয়া হবে।
রাহমানী পয়গাম : বিভিন্ন মহল থেকে গুঞ্জন আছে যেÑ হেফজতে ইসলাম রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে মাঠে আসছে! এ বিষয়ে কী বলবেন।
মাওলানা মাহফুজুল হক : আসলে এ ব্যাপারে বিভ্রান্তি সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই। কারণ আমরা বারবার বলে আসছি- হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন এবং অরাজনৈতিক হিসেবেই দায়িত্ব পালন করে যাবে। একটি মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে হেফাজতের বিরুদ্ধে নানা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে যাচ্ছে। ইনশাআল্লাহ তাদের এ প্রোপাগাণ্ডা কোনো কাজে আসবে না। হেফজতে ইসলাম অতীতের মতোই দেশ-জাতি ও ধর্মের প্রয়োজনে তার গুরু দায়িত্ব একনিষ্ঠভাবে পালন করে যাবে।
রাহমানী পয়গাম : কিছু কিছু মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, হেফাজতে ইসলাম ভেঙ্গে যাচ্ছে। খবরটি কতোটুকু সত্য?
মাওলানা মাহফুজুল হক : হেফাজতের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অপপ্রচারের সর্বশেষ সংযোজন হলো মিডিয়ার এই খবরটি। অতীতের সব অপপ্রচারের ন্যায় এক্ষেত্রেও বিরুদ্ধবাদীরা সম্পূর্ণ হতাশ হবে। আলহামদুল্লিাহ! হেফাজত ঐক্যবদ্ধ আছে এবং ঐক্যবদ্ধভাবেই সামনে এগিয়ে যাবে। বরং অতীত থেকে আরও শক্তিশালী রূপ দেওয়ার জন্য দেশ্যব্যাপী ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। সংগঠনকে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কমিটি মাঠে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
রাহমানী পয়গাম : সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রী-এমপিরা সুযোগ পেলেই কওমি মাদরাসা ও মাদরাসা সংশ্লিষ্টদের নিয়ে উপহাসে লিপ্ত হচ্ছে। কোনো কোনো মন্ত্রি-এমপি তো আলেমদেরকে মোল্লা ইত্যাদি বলে গালাগাল দিয়ে এতো আনন্দ পান যা ভাষায় ব্যক্ত করার নয়। তথ্যমন্ত্রি, খাদ্যমন্ত্রি, পাটমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী এব্যাপারে সবার ওপরে। এর সাথে যোগ হয়েছে জয়ের সাম্পতিক বক্তব্য। এমন প্রেক্ষাপট-ই কি এই বিলটি সম্পর্কে মাদরাসা সংশ্লিষ্টদের সরকারের লক্ষ্য উদ্দেশ্যের ব্যাপারে অধিক ভাবনায় ফেলে দিয়েছে?
মাওলানা মাহফুজুল হক : একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশকে মুসলমানদের দেশ বললে যাদের গায়ে আগুন লাগে, যারা নাস্তিক্যবাদকে বাংলাদেশের আদর্শ বানাতে চায়, ধর্মহীন পশুতন্ত্র কায়েমের জন্য যারা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় শাহাবাগে নাটকমঞ্চ বানায়, নেট, ব্লগ, ফেইসবুক, টুইটার ইত্যাদি সোসাল নেটওয়ার্কগুলোকে যারা নাস্তিক-মুরতাদদের অভয়ারণ্য বানাতে চায়, আল্লাহ-রাসূল সা., ইসলাম ও কুরআন নিয়ে যারা ইতিহাসের জঘন্যতম কটূক্তি করে আসছে- দেশের তৌহিদী জনতা তাদের ষড়যন্ত্রের সকল জাল ছিন্ন করে দেওয়ায় ইসলাম বিদ্বেষী ঐ সকল বর্ণচোরারাই ধর্মীয় চেতনা ও ইসলামি শিক্ষা কেন্দ্রগুলোতে আঘাত হানতে চায়।
এরাই নাস্তিক্যবাদি চেতনা নিয়ে কওমি মাদরাসা ধ্বংসের কাজে হাত দিয়েছে। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ, সর্বস্তরের ইমাম, আলেম, পীর-মাশায়েখগণ সংসদে বিল পাস করিয়ে মাদরাসা দখল ও ধ্বংসের অপচেষ্টা জীবন দিয়ে হলেও রুখে দেবে। বাংলাদেশে ইসলামি ভাবধারা ও সংস্কৃতি বিনাশের এ সুদূরপ্রাসারী চক্রান্ত এদেশের নবীপ্রেমিক তৌহিদী জনতা এক মুহূর্তের জন্যও মেনে নেবে না। সরকার কওমি মাদরাসা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে তা সরকারের জন্যই বুমেরাং হবে।
বর্তমান সরকার মুখে মুখে যতোই ধর্মীয় ভাব প্রকাশ করুকÑ কার্যক্ষেত্রে তারা সম্পূর্ণ বিপরীত কাজই করছে। সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের লাগামহীন বিভিন্ন বক্তব্যই এর পক্ষে বিরাট প্রমাণ।
তারা ওলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদী জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্যই কওমি মাদরাসা নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। ৫ মে শাপলা চত্বরে ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত ও ঘুমন্ত আলেম-হাফেজ ও মুসল্লীদের নির্মমভাবে উৎপীড়ন করে সরকার যে ইসলামপ্রীতির নমুনা দেখিয়েছে, কওমি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ বিলও তেমনি একটি উদ্যোগ বলে মনে হয়।
রাহমানী পয়গাম : সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র জয়ের ‘মাদরাসার ছাত্র কমানোর আন্দোলন শুরু করেছি’ এমন বক্তব্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সর্বত্র প্রতিবাদের ঝড় ওঠেছে। ইসলামি নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক বিবৃতিতে বলেছেন, জয়ের বক্তব্যের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের আসল চেহারা ও চরিত্র জনগণের সামনে আবার উন্মোচিত হয়েছে। ব্যাপারটিকে আপনি কীভাবে দেখছেন।
মাওলানা মাহফুজুল হক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র হিসেবে জয়ের এই বক্তব্যকে হালকাভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সারা দেশের মানুষের মতো আমিও এই বক্তব্যে সঙ্কিত ও মর্মাহত। জাতি তাদের থেকে এমন বক্তব্য আশা করে না। সজীব ওয়াজেদ জয়ের এই বক্তব্য বাস্তবায়িত হলে মাদরাসার ছাত্র তথা সুনাগরিক কমবে এবং দেশে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, লুটেরা ও নেশাগ্রস্তদের সংখ্যা বাড়বে। সজীব ওয়জেদ জয় কর্তৃক মাদরাসা ছাত্র কমানোর আন্দোলনের ঘোষণা জাতির জন্য লজ্জাজনক। এই আন্দোলনে সে পরাজিত হবে ইনশাআল্লাহ। আগামী প্রজন্মের নীতি নৈতিকতা ও যুবচরিত্র রক্ষায় কওমি শিক্ষা ধারার আবেদন অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। এব্যাপারে ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রতি আমাদের একান্ত অনুরোধ থাকবে, আপনারা ঈমানি দায়িত্ব পালনে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কওমি মাদরাসা এবং ছাত্র-ছাত্রী বৃদ্ধির জন্য জোরালো ভূমিকা পালন করুন। সরকার যে ইসলামি শিক্ষা ধ্বংস করতে চায় জয়ের এই বক্তব্যাই তার প্রমাণ। এই বক্তব্য প্রত্যাহার না হলে ইসলামপ্রিয় জনতা আওয়ামী লীগকে লালকার্ড দেখাবে।#
ইসলামপ্রিয় জনতা আওয়ামী লীগকে লালকার্ড দেখাবে
মাওলানা মাহফুজুল হক
রাহমানী পয়গাম : কওমি মাদরাসাসমূহের ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ’ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ এবং বেফাকের তত্ত্বাবধানে দেশের অন্যান্য আঞ্চলিক বোর্ডগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘কওমি মাদরাসা সংরক্ষণ পরিষদ’ তা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ জোরদার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। সরকারি এই উদ্যোগের বিরোধিতা কেন করা হচ্ছে?
মাওলানা মাহফুজুল হক : কওমি মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ নামে সরকারের মেয়াদের একেবারে শেষসময়ে এসে ষড়যন্ত্রমূলক এই রিষয়টিকে সামনে আনা হয়েছে। আমারা মনে করি এই বিল পাস হলে দেশের ঈমান-আমলের অতন্দ্রপ্রহরী কওমি মাদরাসাগুলো পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। মূলত কওমি মাদরাসাকে ধ্বংস করার জন্যেই সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। কওমি মাদরাসার ঐতিহ্য ধ্বংস করে, সিলেবাস পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার বিনিময়ে সনদ লাভের প্রশ্নই আসে না। আমরা কওমি মাদরাসার ওপর সরকারের কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ ছাড়া শুধু সনদের সরকারি স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে আসছিলাম। কিন্তু সরকার এখন সংসদে যে বিল উত্থাপনের লক্ষে খসড়া তৈরি করেছে, তাতে কওমি মাদরাসাগুলোকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে সরকারের আজ্ঞাবহ করার সকল আয়োজন চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিতর্কিত এ বিলে প্রস্তাবিত ‘বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ’-এর চেয়ারম্যানসহ সব সদস্যই সরকার নিয়োগ দেবে। পরিচালনা কমিটি, প্রিন্সিপাল ইত্যাদি সরকার ইচ্ছেমতো বানাতে পারবে। ব্যবস্থাপনাও চলে যাবে কর্তৃপক্ষের হাতে। জনগণের সরাসরি সম্পৃক্ততা, ইচ্ছা ও আন্তরিকতায় পরিচালিত কওমি মাদরাসাগুলো সরকারের পছন্দ-অপছন্দের খেলনায় পরিণত হবে। ধর্মবিদ্বেষী এই কৌশল দেশের মানুষের আস্থা ও ভরসার এই জায়গাটিকে দুর্নীতি, ঘুষ, অনিয়ম, দলবাজি ইত্যাদি পুরোপুরি ধ্বংস করে দিবে।
রাহমানী পয়গাম : কিন্তু আপনারা তো কওমি মাদরাসা সনদের স্বীকৃতিসহ নানা দাবিতে দীর্ঘদিন থেকেই আন্দোলন করে আসছিলেন। যতোদূর জানি শুরুর দিকে বেফাক কর্তৃপক্ষও এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত ছিলো। তাহলে এখন বিরোধিতা করছেন কেন?
মাওলানা মাহফুজুল হক : আন্দোলন যে প্রয়োজনে করা হচ্ছিল, বিরোধিতা তার চেয়ে বড় প্রয়োজনে করা হচ্ছে। সনদের জন্য আন্দোলনের লক্ষ-উদ্দেশ্য ছিল আরও ব্যাপক জনগোষ্ঠীর নিকট এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিচিত করে তার গ্রহণযোগ্যতা ও সেবার পরিধি বিস্তৃত করা। কিন্তু সরকার কওমি সনদের স্বীকৃতির নামে শুরু থেকেই প্রতারণামূলক-রহস্যজনক আচরণ করে আসছে। আমাদের উত্থাপিত শর্ত পূরণ না করে এবং চেয়ারম্যানকে না জানিয়েই কমিশনের কতিপয় ব্যক্তিবর্গ বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু করে। ফলে নেতৃস্থানীয় ওলামা-মাশায়েখদের নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এই কমিশনকে প্রত্যাখ্যান করেন বেফাক সভাপতি, দেশের ওলামা সমাজের অভিভাবক আল্লামা শাহ আহমদ শফী দা. বা. সহ কমিশনের অধিকাংশ সদস্যগণ। আমরা চেয়েছিলাম শিক্ষার এই ধারাকে আরও গতিশীল করতে সরকারিভাবে স্বীকৃতির মতো ন্যূনতম সহযোগিতা। কওমি মাদরাসার ওপর সরকারের যে কোনো প্রকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া শুধু সনদের সরকারি স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে এসেছি। কিন্তু সরকার সংসদে বিল আকারে উত্থাপনের জন্য যে খসড়া তৈরি করেছে, তাতে কওমি মাদরাসাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে সরকারের আজ্ঞাবহ করার সকল আয়োজন চূড়ান্ত করা হয়েছে। ফলাফল এই দাঁড়িয়েছে, আরও ভালোভাবে কাজটি আঞ্জাম দেওয়ার অভিপ্রায়ে দীর্ঘ আন্দোলনের পর বর্তমান এই শিক্ষাব্যবস্থা গভীর খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে বিরাট সংকট । শুরু হয়েছে ভয়াবহ ষড়যন্ত্র। অনিবার্য কারণে এর বিরোধিতায় সর্বস্তরের ওলামায়ে কেরাম প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন, মাঠে নামতে বাধ্য হচ্ছেন। সরকার তার অবস্থান থেকে সরে না আসলে সামনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
রাহমানী পয়গাম : এই বিলটি পাশ হলে সবচেয়ে বড় ক্ষতি কী হবে বলে মনে করেন?
মাওলানা মাহফুজুল হক : ইসলামি শিক্ষার ঐতিহ্যবাহী প্রক্রিয়া কওমি মাদরাসা বাংলাদেশের মানুষকে ধর্মপ্রাণ ও মানবিক বানাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের সাড়ে চার লাখ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন লাখ লাখ খতিব, আলেম, মুফতি, মুহাদ্দিস, মুফাসসির, ইসলাম প্রচারক, গবেষক ও পীর-মাশায়েখ এসব মাদরাসা থেকেই তৈরি হয়। পবিত্র কুরআনের হাফেজ, ক্বারি ও মুয়াল্লিম তৈরিও এসব মাদরাসার অবদান। বিজ্ঞ আলেম ও খাঁটি ইসলামি ব্যক্তিত্ব তৈরির জন্য কওমি মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা অপরিহার্য। বিশেষজ্ঞ মুফতি মুহাদ্দিস তৈরির জন্যও এসব মাদরাসার বিকল্প নেই। কিন্তু সরকারের গৃহিত নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে কওমি মাদরাসার অতিত ঐতিহ্য যেমন হারিয়ে যাবে, তেমনি বাধাগ্রস্ত হবে চলমান ধারাও। তখন এগুলো গতানুগতিক সরকারের তল্পিবাহক প্রতিষ্ঠানে রূপ নেবে।
রাহমানী পয়গাম : দেশের অন্যান্য আঞ্চলিক বোর্ডগুলোর অবস্থান কী? তারা সরকারের সঙ্গে না বেফাকের সঙ্গে?
মাওলানা মাহফুজুল হক : বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক) ছাড়াও আঞ্চলিক কিছু বোর্ড রয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ দ্বারা স্পষ্ট হয়েছে যে, বেফাকের মতোই অন্যান্য আঞ্চলিক বোর্ডগুলোও চলমান এই ইস্যুতে বেফাকের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে।
গিত ২ সেপ্টেম্বর ঢাকার মালিবাগে অনুষ্ঠিত শীর্ষ দায়িত্বশীলদের বৈঠকে বেফাকের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও তানযীমুল মাদারিসিল কওমিয়ার প্রধান মুফতি আব্দুর রহমান, পটিয়া মাদরাসাকেন্দ্রিক বোর্ড ‘ইত্তিহাদুল মাদারিসিল কওমিয়া’র সভাপতি, আল্লামা সুলতান যওক নদভী, ওই বোর্ডের শীর্ষ দায়িত্বশীল, পটিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল আল্লামা আব্দুল হালীম বুখারী, সিলেট অঞ্চলের বোর্ড ‘আজাদ দ্বীনি এদারা’র শীর্ষ ব্যক্তিত্ব আল্লামা আব্দুল বাসেত বরকতপুরীসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামাদের উপস্থিতিতে কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও এই বোর্ডগুলোর বাইরে যে অল্প সংখ্যক মাদরাসা রয়েছে, তারাও সরকারের এই পদক্ষেপের সঙ্গে একমত নয়। এ হিসেবে বলা যায়Ñ দেশের প্রায় সকল কওমি মাদরাসা ও দায়িত্বশীলগণ এ ব্যাপারে সরকারবিরোধী অবস্থানে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।
রাহমানী পয়গাম : তাহলে সকল বোর্ডগুলোর পক্ষ থেকে সম্মিলিত কোনো কর্মসূচি দেওয়া হবে কি?
মাওলানা মাহফুজুল হক : হ্যাঁ, আমরা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি এবং সামনের দিনগুলোতে কীভাবে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি পালন করা যায়Ñ সে লক্ষেই সকল বোর্ডগুলোর সমন্বয়ে ‘কওমি মাদরাসা সংরক্ষণ পরিষদ’ গঠিত হয়েছে। শীর্ষ উলামাদের পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর বোর্ডগুলোর দায়িত্বশীলদের উপস্থিতিতে জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও কর্মসূচিও আসবে।
রাহমানী পয়গাম : সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে একটি কথা বারবার বলার চেষ্টা করা হচ্ছে যে, ‘কওমি শিক্ষাকর্তৃপক্ষ’ বিলটি মাদরাসা শিক্ষাকে আরও গতিশীল ও আধুনিক করার জন্য। আপনি কি এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত?
মাওলানা মাহফুজুল হক : পূর্বাপর ঘটনাপ্রবাহ সামনে রাখলে একথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, বর্তমান সরকার কর্তৃক প্রস্তুতকৃত এই বিলটি মোটেও কওমি মাদরাসার অনুকূলে নয়। আর সরকারের পক্ষ থেকে যে কথাটি বলার চেষ্টা করা হচ্ছেÑ তা নিছক একটি রাজনৈতিক বক্তব্য। আমরা জাতিকে এসব বক্তব্যে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ করছি।
রাহমানী পয়গাম : আপনি তো হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের সঙ্গেও সম্পৃক্ত। এই ইস্যুতে হেফাজতের কর্মসূচি কী?
মাওলানা মাহফুজুল হক : হেফাজতে ইসলাম যেহেতু কওমি ঘরনারই একটি অরাজনৈতিক সংগঠনÑ তাই কওমি মাদরাসার ভালো-মন্দ নিয়ে হেফাজতে ইসলাম সর্বদা তৎপর। এরই ফলশ্র“তিতে ইতোমধ্যে হেফাজতের পক্ষ থেকেও কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ২৫ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সেখানে একথাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, সরকার যদি আমাদরে যৌক্তিক দাবিগুলো বিবেচনায় না আনে তাহলে, আগামী দিনগুলোতে কঠিন থেকে কঠিন কর্মসূচি দেওয়া হবে।
রাহমানী পয়গাম : বিভিন্ন মহল থেকে গুঞ্জন আছে যেÑ হেফজতে ইসলাম রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে মাঠে আসছে! এ বিষয়ে কী বলবেন।
মাওলানা মাহফুজুল হক : আসলে এ ব্যাপারে বিভ্রান্তি সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই। কারণ আমরা বারবার বলে আসছি- হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন এবং অরাজনৈতিক হিসেবেই দায়িত্ব পালন করে যাবে। একটি মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে হেফাজতের বিরুদ্ধে নানা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে যাচ্ছে। ইনশাআল্লাহ তাদের এ প্রোপাগাণ্ডা কোনো কাজে আসবে না। হেফজতে ইসলাম অতীতের মতোই দেশ-জাতি ও ধর্মের প্রয়োজনে তার গুরু দায়িত্ব একনিষ্ঠভাবে পালন করে যাবে।
রাহমানী পয়গাম : কিছু কিছু মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, হেফাজতে ইসলাম ভেঙ্গে যাচ্ছে। খবরটি কতোটুকু সত্য?
মাওলানা মাহফুজুল হক : হেফাজতের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অপপ্রচারের সর্বশেষ সংযোজন হলো মিডিয়ার এই খবরটি। অতীতের সব অপপ্রচারের ন্যায় এক্ষেত্রেও বিরুদ্ধবাদীরা সম্পূর্ণ হতাশ হবে। আলহামদুল্লিাহ! হেফাজত ঐক্যবদ্ধ আছে এবং ঐক্যবদ্ধভাবেই সামনে এগিয়ে যাবে। বরং অতীত থেকে আরও শক্তিশালী রূপ দেওয়ার জন্য দেশ্যব্যাপী ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। সংগঠনকে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কমিটি মাঠে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
রাহমানী পয়গাম : সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রী-এমপিরা সুযোগ পেলেই কওমি মাদরাসা ও মাদরাসা সংশ্লিষ্টদের নিয়ে উপহাসে লিপ্ত হচ্ছে। কোনো কোনো মন্ত্রি-এমপি তো আলেমদেরকে মোল্লা ইত্যাদি বলে গালাগাল দিয়ে এতো আনন্দ পান যা ভাষায় ব্যক্ত করার নয়। তথ্যমন্ত্রি, খাদ্যমন্ত্রি, পাটমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী এব্যাপারে সবার ওপরে। এর সাথে যোগ হয়েছে জয়ের সাম্পতিক বক্তব্য। এমন প্রেক্ষাপট-ই কি এই বিলটি সম্পর্কে মাদরাসা সংশ্লিষ্টদের সরকারের লক্ষ্য উদ্দেশ্যের ব্যাপারে অধিক ভাবনায় ফেলে দিয়েছে?
মাওলানা মাহফুজুল হক : একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশকে মুসলমানদের দেশ বললে যাদের গায়ে আগুন লাগে, যারা নাস্তিক্যবাদকে বাংলাদেশের আদর্শ বানাতে চায়, ধর্মহীন পশুতন্ত্র কায়েমের জন্য যারা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় শাহাবাগে নাটকমঞ্চ বানায়, নেট, ব্লগ, ফেইসবুক, টুইটার ইত্যাদি সোসাল নেটওয়ার্কগুলোকে যারা নাস্তিক-মুরতাদদের অভয়ারণ্য বানাতে চায়, আল্লাহ-রাসূল সা., ইসলাম ও কুরআন নিয়ে যারা ইতিহাসের জঘন্যতম কটূক্তি করে আসছে- দেশের তৌহিদী জনতা তাদের ষড়যন্ত্রের সকল জাল ছিন্ন করে দেওয়ায় ইসলাম বিদ্বেষী ঐ সকল বর্ণচোরারাই ধর্মীয় চেতনা ও ইসলামি শিক্ষা কেন্দ্রগুলোতে আঘাত হানতে চায়।
এরাই নাস্তিক্যবাদি চেতনা নিয়ে কওমি মাদরাসা ধ্বংসের কাজে হাত দিয়েছে। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ, সর্বস্তরের ইমাম, আলেম, পীর-মাশায়েখগণ সংসদে বিল পাস করিয়ে মাদরাসা দখল ও ধ্বংসের অপচেষ্টা জীবন দিয়ে হলেও রুখে দেবে। বাংলাদেশে ইসলামি ভাবধারা ও সংস্কৃতি বিনাশের এ সুদূরপ্রাসারী চক্রান্ত এদেশের নবীপ্রেমিক তৌহিদী জনতা এক মুহূর্তের জন্যও মেনে নেবে না। সরকার কওমি মাদরাসা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে তা সরকারের জন্যই বুমেরাং হবে।
বর্তমান সরকার মুখে মুখে যতোই ধর্মীয় ভাব প্রকাশ করুকÑ কার্যক্ষেত্রে তারা সম্পূর্ণ বিপরীত কাজই করছে। সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের লাগামহীন বিভিন্ন বক্তব্যই এর পক্ষে বিরাট প্রমাণ।
তারা ওলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদী জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্যই কওমি মাদরাসা নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। ৫ মে শাপলা চত্বরে ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত ও ঘুমন্ত আলেম-হাফেজ ও মুসল্লীদের নির্মমভাবে উৎপীড়ন করে সরকার যে ইসলামপ্রীতির নমুনা দেখিয়েছে, কওমি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ বিলও তেমনি একটি উদ্যোগ বলে মনে হয়।
রাহমানী পয়গাম : সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র জয়ের ‘মাদরাসার ছাত্র কমানোর আন্দোলন শুরু করেছি’ এমন বক্তব্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সর্বত্র প্রতিবাদের ঝড় ওঠেছে। ইসলামি নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক বিবৃতিতে বলেছেন, জয়ের বক্তব্যের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের আসল চেহারা ও চরিত্র জনগণের সামনে আবার উন্মোচিত হয়েছে। ব্যাপারটিকে আপনি কীভাবে দেখছেন।
মাওলানা মাহফুজুল হক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র হিসেবে জয়ের এই বক্তব্যকে হালকাভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সারা দেশের মানুষের মতো আমিও এই বক্তব্যে সঙ্কিত ও মর্মাহত। জাতি তাদের থেকে এমন বক্তব্য আশা করে না। সজীব ওয়াজেদ জয়ের এই বক্তব্য বাস্তবায়িত হলে মাদরাসার ছাত্র তথা সুনাগরিক কমবে এবং দেশে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, লুটেরা ও নেশাগ্রস্তদের সংখ্যা বাড়বে। সজীব ওয়জেদ জয় কর্তৃক মাদরাসা ছাত্র কমানোর আন্দোলনের ঘোষণা জাতির জন্য লজ্জাজনক। এই আন্দোলনে সে পরাজিত হবে ইনশাআল্লাহ। আগামী প্রজন্মের নীতি নৈতিকতা ও যুবচরিত্র রক্ষায় কওমি শিক্ষা ধারার আবেদন অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। এব্যাপারে ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রতি আমাদের একান্ত অনুরোধ থাকবে, আপনারা ঈমানি দায়িত্ব পালনে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কওমি মাদরাসা এবং ছাত্র-ছাত্রী বৃদ্ধির জন্য জোরালো ভূমিকা পালন করুন। সরকার যে ইসলামি শিক্ষা ধ্বংস করতে চায় জয়ের এই বক্তব্যাই তার প্রমাণ। এই বক্তব্য প্রত্যাহার না হলে ইসলামপ্রিয় জনতা আওয়ামী লীগকে লালকার্ড দেখাবে।#