পত্রিকায় সংবাদ বেরিয়েছে- ‘খোকাকে খুঁজছে পুলিশ। বাসায় দু’দফা অভিযান।’ খোকা মানে খোকন নয়। সাদেক হোসেন খোকা। বিরোধীদলের লড়াকু নেতা। সুতরাং এই সংবাদ স্বাভাবিক। এও স্বাভাবিক নিজ বাসায় ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় আত্মঘাতী বোমা হামলায় পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের আইনমন্ত্রী ইসরারুল্লাহসহ অন্তত সাতজন নিহত হয়েছে। এও কোনো আশ্চর্য কথা নয় ‘সিরিয়ার শীর্ষস্থানীয় এক গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে বিদ্রোহীরা।’ (সমকাল: ১৯/১০/১৩)
স্বাভাবিক এই কারণে যে মরিচ খাবে তার ঝাল তো লাগবেই। তাছাড়া যে খেলতে নেমেছে সে হারতেও পারে। হারবার শক্তি যার নেই খেলতে নামা তার পক্ষে সাজে না। সচেতন প্রতিটি মানুষই জানে এখন রাজনীতি মানে শুধু ক্ষমতার খেলাই নয় কাঁচা টাকার জুয়া খেলাও। আজ খোকাকে খোঁজা হচ্ছে। কপাল ভালো হলে এই খোঁজাখুঁজির তালিকায় আগামীকাল মহান দুই নেত্রীকেও একসাথে দেখার সৌভাগ্য হতে পারে এই হতভাগা দেশের। মইন উ আর ফখরুদ্দীনরা তো সময়ের সৃষ্টি! সুতরাং রাজনীতির খেলোয়াররা খেলবে, হারবে, হারাবে এতো খুবই স্বাভাবিক ঘটনা!
বহুকাল আগে বাঙলাসাহিত্যের প্রবাদপুরুষ শরৎচন্দ্র তার কিংবদন্তী উপন্যাস শ্রীকান্তে লিখে গেছেন‘স্কুলের মাঠে বাঙালি ও মুসলমান ছাত্রদের ‘ফুটবল ম্যাচ’। সন্ধ্যা হয় হয়। মগ্ন হইয়া দেখিতেছি। আনন্দের সীমা নাই, হঠাৎ ওরে বাবা এ কি রে! চটাচট শব্দ এবং ‘মারো শালাকে, ধরো শালাকে।’ শরৎ বাবু বলেছেন কোলকাতার খেলার মাঠের কথা। আর এখানে মাঠ বলতে পুরো বাংলাদেশ। খেলোয়ারদের একদল এখানে স্বঘোষিত বাঙালি। সুতরাং ডিজিটাল ফর্মুলায় অন্যদল ‘মুসলমান।’ খেলা শেষে ‘ধরো মারো’ দুই মাঠেই সমান সমারোহে কম্পমান। সুতরাং চৌদ্দদল আর আঠারদলের ‘রক্তম্যাচ’ দর্শক হিসেবে এই জাতিকে দেখতেই হবে। এটা এখন অলিখিত বিধান।
রক্তম্যাচের প্রস্তুতিও চলছে ভয়ঙ্কররূপে। পত্রিকার ভাষায় ‘সরকারের শেষ সময়ে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নেওয়ার হিড়িক পড়েছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। জেলা-প্রশাসনের আগ্নেয়াস্ত্র শাখা থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, সর্বত্রই লাইসেন্স প্রত্যাশী, বিশেষ করে ক্ষমতাসীনদের চাপ বেড়ে গেছে। এক্ষেত্রে তাদের লক্ষ্য ২৪ অক্টোবরের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স হাতে পাওয়া। সবচে’ বেশি দৌড়ঝাঁপ হচ্ছে পিস্তল রিভলবারের লাইসেন্স নিতে। তারা সরকারের মন্ত্রী এমপিদের সুপারিশসহ ধরনা দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে মহাজোট আমলে কয়েক হাজার আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে যার অধিকাংশই রাজনৈতিক বিবেচনায়। যারা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছেন তাদের বড় অংশই আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাছাড়া গত পাঁচ বছরে বিএনপি ঘরনার কোনো রাজনীতিককে ব্যক্তি নিরাপত্তার আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে এমন নজির নেই। হালে ঢাকার এমপি সানজিদা খানমের পরিবারের পক্ষ থেকে চারটি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা হয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসনে।’ [আমাদের সময় : ২১.১০১৩]
অত:পর এই আগ্নেয়াস্ত্রের দ্বারা কিভাবে নিরাপত্তা বিধান করে, গত পাঁচ বছরের দৈনিক পত্রিকায় তার অসংখ্য সচিত্র নমুনা আমরা দেখেছি। সেইসব বীরকাহিনী স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য এখন একটি উদ্ধৃতি দিই। ‘ জেল থেকে জামিনে বের হওয়ার এক মাস যেতে না যেতেই যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য হেলাল আকবর বাবরের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের বাসায় ও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে আবারও গুলি করার অভিযোগ ওঠেছে।’
পাঠক! জামিনে মানে তিনি কারাগার থেকে এসেছেন। কারাগারে গেলেন কেন? পত্রিকার ভাষায় ‘জানা গেছে গত ২৪ জুন রেলওয়ে সিআরবি এলাকায় দরপত্র নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দু'পক্ষের বন্ধুকযুদ্ধে এক শিশুসহ দু’জন নিহত হন। এই ঘটনায় পুলিশ হেলাল আকবরসহ ৫২জনকে গ্রেফতার করে।’ [ঐ : ২১.১০.১৩]
এই হলো ফাইনালের আগে সম্পাদিত শত সহস্র রক্তম্যাচের একটি। একজন নিষ্পাপ শিশুর রক্তে যেখানে এক পক্ষের বিজয় লেখা হয়েছে। অন্যদিকে ফাইনালম্যাচের আগে শামীম ওসমান ২৫ অক্টোবর ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা- সিলেট মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট কাঁচপুর সেতু দখলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন ‘সেদিন বিএনপি জামায়াত হেফাজত আইভি রাব্বিদের যাকে পাওয়া যাবে তাকেই পিটিয়ে হাত পা ভেঙে দিতে হবে। [প্রথম আলো : ২২.১০.১৩]
প্রস্তুতি প্র্যাক্টিস ও হুংকারের এই ইতিহাস দীর্ঘ। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৪ অক্টোবর ঢাকা মহানগর বিএনপির এক সভায় পত্রিকার ভাষ্যমতেÑখোকা বলেছেন, দা-কুড়াল বল্লম লাঠিসোটাসহ যা কিছু আছে তা নিয়ে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। [সমকাল: ১৯.১০.১৩]
অর্থাৎ একদল লাইসেন্সসহ অস্ত্রসস্ত্রে প্রস্তুত। আরেকদল প্রস্তুত দা-কুড়াল আর লাঠিসোটা নিয়ে। দেশের জনগণ এখানে শুধুই দর্শক এবং বাধ্যগত দর্শক। এখানে এই খেলায় কারো আপত্তি করার অধিকার নেই। কারণ এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। আমাদের দেশের নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।’
প্রশ্ন হলো এই দেশেই প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী রয়েছে যারা প্রায় সবাই এবং তাদের অন্তত আট থেকে দশ কোটি অভিভাবক চায় না তাদের সন্তানরা এই রক্তম্যাচের শিকার হোক! অথচ এই ‘মানুষমারা’ ম্যাচ যখন জমে ওঠতে যাচ্ছে তখন এই ‘জাতির ভবিষ্যত’ বলে কথিত শিক্ষার্থীদের সামনে পরীক্ষা এবং এগিয়ে যাওয়ার হাতছানি, এই নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর জুড়ে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার মৌসুম। শিক্ষাবোর্ডের তথ্যানুযায়ী ৩ নভেম্বর শুরু হচ্ছে জেএসসি ও দাখিল পরীক্ষা। ২০ নভেম্বর থেকে পঞ্চমশ্রেণির সমাপনী ও এবতেদায়ি পরীক্ষা। তাছাড়া নভেম্বর ও ডিসেম্বর জুড়ে সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ও দশম শ্রেণির টেস্ট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ সময়েই অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজগুলোর বার্ষিক ও সেমিস্টার পরীক্ষা। এই সময়েই ৩৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। অথচ চার কোটি শিক্ষার্থীর এই পরীক্ষা এখন লড়াকু সংঘাতপ্রিয় ও রক্তপাগল রাজনীতির তরবারির অধীনে। এই চারকোটি শিক্ষার্থীর প্রশ্ন শিক্ষা কি তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার নয়? তাহলে কেন তাদের অধিকার রাজনৈতিক দস্যিতার বুটের নিচে পিষ্ট হচ্ছে বার বার? একবিংশ শতাব্দির এই আধুনিক কালে এবং গণতন্ত্রের যৌবন বেলায় কে দেবে এর উত্তর?
ঘটনা কি এখানেই শেষ? ২৫ অক্টোবর শুক্রবার জুমার নামাজের আগে-পরে জামায়াত বিএনপি নাশকতা চালাতে পারে কল্পিত এমন আশংকায় দলীয় নেতাকর্র্মীদের ওইদিন মসজিদে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এই অভিযানে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ছাত্রলীগকে। [আমাদরে সময় : ২১.১০.১৩]
মাশাআল্লাহ! এবার পাঁচ লক্ষাধিক মসজিদের ইমাম খতিবদের মুখও সেলাই করে দেওয়া হলো। তাও বিশ্বজিতকে খুন করে চাপাতিলীগের শিরোপাজয়ী ছাত্রলীগকে দেওয়া হচ্ছে মসজিদ পাহারার দায়িত্ব। সুতরাং কেউ বিশ্বজিতের ভাগ্যবরণ করতে চাইলেই কেবল বলতে পারবে ক্ষমতার কুরসি আর চাঁদাবাজি ও রক্তম্যাচের একচ্ছত্র অধিকার ধরে রাখার জন্য খোদার ঘরের টুটি চেপে ধরা মহা অন্যায়। আজ হোক কাল হোক এই বীভৎস অপরাধের বিচার হবেই।
পাঁচ লাখ মসজিদ পাঁচ লাখ সত্য-ন্যায়ের চিরউন্নত পাঠশালা। সত্যকে, কল্যাণকে এবং ন্যায়কে উৎসাহিত করা এই পাঠশালার চিরাচরিত রুটিন। এই পাঠশালার আদর্শপাঠ অন্যায়কে প্রতিবাদ করা মানুষের অন্তরে অন্যায় অবিচার অপরাধের প্রতি ঘৃণা খেদ ও ক্ষোভ সৃষ্টি করা। একটি আদর্শ শক্তিশালী সমৃদ্ধ সমাজনির্মাণের এই বুনিয়াদি পাঠই পবিত্র ইসলামের প্রাণশক্তি। অন্যায় যেই করুক সে অপরাধী, সে সমাজ ও রাষ্ট্রের শত্র“। অপরাধী কারো বন্ধু হতে পারে না। কী ভয়াবহ কথা সমাজের একজন অতিসাধারণ নাগরিকও যে ছাত্রলীগকে জানে খুনি চাঁদাবাজ টেন্ডারবাজ ও চাপাতিলীগ হিসেবে খোদার ঘর মসজিদের কণ্ঠ চেপে ধরার দায়িত্ব দিলেন প্রধানমন্ত্রী তাদের হাতে! এই কলঙ্ক রাখি কোথায়!
মনে রাখা ভালো চারকোটি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত রুখে দাঁড়িয়েছে যে কুরসির লালসা ও লাইসেন্সধারী অস্ত্রের দম্ভ; যে রাজনৈতিক নোংরা, নীচ ও লোলুপ হুংকারে কাঁপছে দেশ থরথর যদি এই চারকোটি সন্তানের অভিভাবকরা ঘুরে দাঁড়ায়, ঘুরে দাঁড়ায় মুষ্ঠিবদ্ধ প্রতিবাদে পাঁচ লাখ মসজিদ আল্লাহর ঘরকে যারা ভালোবাসে তারা তাহলে কী পরিণতি হবে দেশের! দেশের সকল শিক্ষার্থী ও ধর্মপ্রাণ মানুষকে জোর করে প্রতিপক্ষের কোর্টে ঠেলে দেওয়া কি কোনো বুদ্ধিমানের কাজ?
২৪ অক্টোবর’ ১৩
ঢাকা
স্বাভাবিক এই কারণে যে মরিচ খাবে তার ঝাল তো লাগবেই। তাছাড়া যে খেলতে নেমেছে সে হারতেও পারে। হারবার শক্তি যার নেই খেলতে নামা তার পক্ষে সাজে না। সচেতন প্রতিটি মানুষই জানে এখন রাজনীতি মানে শুধু ক্ষমতার খেলাই নয় কাঁচা টাকার জুয়া খেলাও। আজ খোকাকে খোঁজা হচ্ছে। কপাল ভালো হলে এই খোঁজাখুঁজির তালিকায় আগামীকাল মহান দুই নেত্রীকেও একসাথে দেখার সৌভাগ্য হতে পারে এই হতভাগা দেশের। মইন উ আর ফখরুদ্দীনরা তো সময়ের সৃষ্টি! সুতরাং রাজনীতির খেলোয়াররা খেলবে, হারবে, হারাবে এতো খুবই স্বাভাবিক ঘটনা!
বহুকাল আগে বাঙলাসাহিত্যের প্রবাদপুরুষ শরৎচন্দ্র তার কিংবদন্তী উপন্যাস শ্রীকান্তে লিখে গেছেন‘স্কুলের মাঠে বাঙালি ও মুসলমান ছাত্রদের ‘ফুটবল ম্যাচ’। সন্ধ্যা হয় হয়। মগ্ন হইয়া দেখিতেছি। আনন্দের সীমা নাই, হঠাৎ ওরে বাবা এ কি রে! চটাচট শব্দ এবং ‘মারো শালাকে, ধরো শালাকে।’ শরৎ বাবু বলেছেন কোলকাতার খেলার মাঠের কথা। আর এখানে মাঠ বলতে পুরো বাংলাদেশ। খেলোয়ারদের একদল এখানে স্বঘোষিত বাঙালি। সুতরাং ডিজিটাল ফর্মুলায় অন্যদল ‘মুসলমান।’ খেলা শেষে ‘ধরো মারো’ দুই মাঠেই সমান সমারোহে কম্পমান। সুতরাং চৌদ্দদল আর আঠারদলের ‘রক্তম্যাচ’ দর্শক হিসেবে এই জাতিকে দেখতেই হবে। এটা এখন অলিখিত বিধান।
রক্তম্যাচের প্রস্তুতিও চলছে ভয়ঙ্কররূপে। পত্রিকার ভাষায় ‘সরকারের শেষ সময়ে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নেওয়ার হিড়িক পড়েছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। জেলা-প্রশাসনের আগ্নেয়াস্ত্র শাখা থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, সর্বত্রই লাইসেন্স প্রত্যাশী, বিশেষ করে ক্ষমতাসীনদের চাপ বেড়ে গেছে। এক্ষেত্রে তাদের লক্ষ্য ২৪ অক্টোবরের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স হাতে পাওয়া। সবচে’ বেশি দৌড়ঝাঁপ হচ্ছে পিস্তল রিভলবারের লাইসেন্স নিতে। তারা সরকারের মন্ত্রী এমপিদের সুপারিশসহ ধরনা দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে মহাজোট আমলে কয়েক হাজার আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে যার অধিকাংশই রাজনৈতিক বিবেচনায়। যারা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছেন তাদের বড় অংশই আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাছাড়া গত পাঁচ বছরে বিএনপি ঘরনার কোনো রাজনীতিককে ব্যক্তি নিরাপত্তার আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে এমন নজির নেই। হালে ঢাকার এমপি সানজিদা খানমের পরিবারের পক্ষ থেকে চারটি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা হয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসনে।’ [আমাদের সময় : ২১.১০১৩]
অত:পর এই আগ্নেয়াস্ত্রের দ্বারা কিভাবে নিরাপত্তা বিধান করে, গত পাঁচ বছরের দৈনিক পত্রিকায় তার অসংখ্য সচিত্র নমুনা আমরা দেখেছি। সেইসব বীরকাহিনী স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য এখন একটি উদ্ধৃতি দিই। ‘ জেল থেকে জামিনে বের হওয়ার এক মাস যেতে না যেতেই যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য হেলাল আকবর বাবরের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের বাসায় ও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে আবারও গুলি করার অভিযোগ ওঠেছে।’
পাঠক! জামিনে মানে তিনি কারাগার থেকে এসেছেন। কারাগারে গেলেন কেন? পত্রিকার ভাষায় ‘জানা গেছে গত ২৪ জুন রেলওয়ে সিআরবি এলাকায় দরপত্র নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দু'পক্ষের বন্ধুকযুদ্ধে এক শিশুসহ দু’জন নিহত হন। এই ঘটনায় পুলিশ হেলাল আকবরসহ ৫২জনকে গ্রেফতার করে।’ [ঐ : ২১.১০.১৩]
এই হলো ফাইনালের আগে সম্পাদিত শত সহস্র রক্তম্যাচের একটি। একজন নিষ্পাপ শিশুর রক্তে যেখানে এক পক্ষের বিজয় লেখা হয়েছে। অন্যদিকে ফাইনালম্যাচের আগে শামীম ওসমান ২৫ অক্টোবর ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা- সিলেট মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট কাঁচপুর সেতু দখলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন ‘সেদিন বিএনপি জামায়াত হেফাজত আইভি রাব্বিদের যাকে পাওয়া যাবে তাকেই পিটিয়ে হাত পা ভেঙে দিতে হবে। [প্রথম আলো : ২২.১০.১৩]
প্রস্তুতি প্র্যাক্টিস ও হুংকারের এই ইতিহাস দীর্ঘ। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৪ অক্টোবর ঢাকা মহানগর বিএনপির এক সভায় পত্রিকার ভাষ্যমতেÑখোকা বলেছেন, দা-কুড়াল বল্লম লাঠিসোটাসহ যা কিছু আছে তা নিয়ে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। [সমকাল: ১৯.১০.১৩]
অর্থাৎ একদল লাইসেন্সসহ অস্ত্রসস্ত্রে প্রস্তুত। আরেকদল প্রস্তুত দা-কুড়াল আর লাঠিসোটা নিয়ে। দেশের জনগণ এখানে শুধুই দর্শক এবং বাধ্যগত দর্শক। এখানে এই খেলায় কারো আপত্তি করার অধিকার নেই। কারণ এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। আমাদের দেশের নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।’
প্রশ্ন হলো এই দেশেই প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী রয়েছে যারা প্রায় সবাই এবং তাদের অন্তত আট থেকে দশ কোটি অভিভাবক চায় না তাদের সন্তানরা এই রক্তম্যাচের শিকার হোক! অথচ এই ‘মানুষমারা’ ম্যাচ যখন জমে ওঠতে যাচ্ছে তখন এই ‘জাতির ভবিষ্যত’ বলে কথিত শিক্ষার্থীদের সামনে পরীক্ষা এবং এগিয়ে যাওয়ার হাতছানি, এই নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর জুড়ে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার মৌসুম। শিক্ষাবোর্ডের তথ্যানুযায়ী ৩ নভেম্বর শুরু হচ্ছে জেএসসি ও দাখিল পরীক্ষা। ২০ নভেম্বর থেকে পঞ্চমশ্রেণির সমাপনী ও এবতেদায়ি পরীক্ষা। তাছাড়া নভেম্বর ও ডিসেম্বর জুড়ে সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ও দশম শ্রেণির টেস্ট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ সময়েই অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজগুলোর বার্ষিক ও সেমিস্টার পরীক্ষা। এই সময়েই ৩৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। অথচ চার কোটি শিক্ষার্থীর এই পরীক্ষা এখন লড়াকু সংঘাতপ্রিয় ও রক্তপাগল রাজনীতির তরবারির অধীনে। এই চারকোটি শিক্ষার্থীর প্রশ্ন শিক্ষা কি তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার নয়? তাহলে কেন তাদের অধিকার রাজনৈতিক দস্যিতার বুটের নিচে পিষ্ট হচ্ছে বার বার? একবিংশ শতাব্দির এই আধুনিক কালে এবং গণতন্ত্রের যৌবন বেলায় কে দেবে এর উত্তর?
ঘটনা কি এখানেই শেষ? ২৫ অক্টোবর শুক্রবার জুমার নামাজের আগে-পরে জামায়াত বিএনপি নাশকতা চালাতে পারে কল্পিত এমন আশংকায় দলীয় নেতাকর্র্মীদের ওইদিন মসজিদে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এই অভিযানে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ছাত্রলীগকে। [আমাদরে সময় : ২১.১০.১৩]
মাশাআল্লাহ! এবার পাঁচ লক্ষাধিক মসজিদের ইমাম খতিবদের মুখও সেলাই করে দেওয়া হলো। তাও বিশ্বজিতকে খুন করে চাপাতিলীগের শিরোপাজয়ী ছাত্রলীগকে দেওয়া হচ্ছে মসজিদ পাহারার দায়িত্ব। সুতরাং কেউ বিশ্বজিতের ভাগ্যবরণ করতে চাইলেই কেবল বলতে পারবে ক্ষমতার কুরসি আর চাঁদাবাজি ও রক্তম্যাচের একচ্ছত্র অধিকার ধরে রাখার জন্য খোদার ঘরের টুটি চেপে ধরা মহা অন্যায়। আজ হোক কাল হোক এই বীভৎস অপরাধের বিচার হবেই।
পাঁচ লাখ মসজিদ পাঁচ লাখ সত্য-ন্যায়ের চিরউন্নত পাঠশালা। সত্যকে, কল্যাণকে এবং ন্যায়কে উৎসাহিত করা এই পাঠশালার চিরাচরিত রুটিন। এই পাঠশালার আদর্শপাঠ অন্যায়কে প্রতিবাদ করা মানুষের অন্তরে অন্যায় অবিচার অপরাধের প্রতি ঘৃণা খেদ ও ক্ষোভ সৃষ্টি করা। একটি আদর্শ শক্তিশালী সমৃদ্ধ সমাজনির্মাণের এই বুনিয়াদি পাঠই পবিত্র ইসলামের প্রাণশক্তি। অন্যায় যেই করুক সে অপরাধী, সে সমাজ ও রাষ্ট্রের শত্র“। অপরাধী কারো বন্ধু হতে পারে না। কী ভয়াবহ কথা সমাজের একজন অতিসাধারণ নাগরিকও যে ছাত্রলীগকে জানে খুনি চাঁদাবাজ টেন্ডারবাজ ও চাপাতিলীগ হিসেবে খোদার ঘর মসজিদের কণ্ঠ চেপে ধরার দায়িত্ব দিলেন প্রধানমন্ত্রী তাদের হাতে! এই কলঙ্ক রাখি কোথায়!
মনে রাখা ভালো চারকোটি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত রুখে দাঁড়িয়েছে যে কুরসির লালসা ও লাইসেন্সধারী অস্ত্রের দম্ভ; যে রাজনৈতিক নোংরা, নীচ ও লোলুপ হুংকারে কাঁপছে দেশ থরথর যদি এই চারকোটি সন্তানের অভিভাবকরা ঘুরে দাঁড়ায়, ঘুরে দাঁড়ায় মুষ্ঠিবদ্ধ প্রতিবাদে পাঁচ লাখ মসজিদ আল্লাহর ঘরকে যারা ভালোবাসে তারা তাহলে কী পরিণতি হবে দেশের! দেশের সকল শিক্ষার্থী ও ধর্মপ্রাণ মানুষকে জোর করে প্রতিপক্ষের কোর্টে ঠেলে দেওয়া কি কোনো বুদ্ধিমানের কাজ?
২৪ অক্টোবর’ ১৩
ঢাকা