সম্পাদকীয়
লেবু বেশি কচলালে তিতা হয়
কচলালে লেবু তিতা হয়‘লেবু কচলালে তিতা হয়’ কিন্তু যে কচলায় সে মনে করে আরেকটু রস পেলে মন্দ কী! এই আরেকটু রস পাওয়ার আশায় সে কচলাতে থাকে। শেষে আরেকটু রস পাওয়া যায় ঠিকই- কিন্তু লেবুর সেই সুবাস বা স্বাদ কোনোটাই আর অবশিষ্ট থাকে না। এই অতিরিক্ত রসটুকু পূর্ণ লেবুটার স্বাদকেই বিস্বাদ করে দেয়। কখনো এতে লেবুর সুস্বাদু শরবতও তিতা হয়ে যায়। প্রবাদটি আমাদের বাংলা ভাষায় সর্বজনবিদিত। প্রবাদ সবাই মানে। সবাই মানলেও আমাদের রাজনীতিবিদরা মনে হয় মানতে নারাজ। ৯৬ এর তুলনায় ২০০৬ এ তৎকালীন বিদায়ী সরকার বিএনপি ইলেকশনে অতিমাত্রায় ইঞ্জিনিয়ারিং করেছিলো। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। তাইতো ৯৬ এ বিএনপি হারলেও শতাধিক আসন নিয়ে মর্যাদাপূর্ণ বিরোধীদল ছিলো। কিন্তু ২০০৬ এ নানারকম ছল-চাতুরির আশ্রয় আর মেকানিজম বিএনপির জন্য হিতে বিপরীত হয়েছে। যে ভাবেই হোক ২০০৮ এ নির্বাচন হলো এবং যে কারণেই হোক বিএনপিকে তাতে অংশগ্রহণ করতে হলো। আর যে উপায়েই হোক তাতে বিএনপির ভাগ্যে ৩০ টির বেশি আসন জুটলো না। বেশি কচলাতে গিয়ে বিএনপির লেবু এতোটাই তিতা হয়েছিলো।
আওয়ামীলীগ এখন বিদায়ী সরকার। ২০০১ এ তারা চারদলীয় জোটের কাছে হেরেছিলো। কিন্তু ২০১৩ তে এসে আওয়ামীলীগ আর হারতে চাইছে না। আর এজন্য বহু আগে থেকেই তারা লেবু কচলাতে আরম্ভ করে দিয়েছে। বিতর্কিত সংশোধনীর মাধ্যমে তারা সর্বজনবিদিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করে দেয়। আর এ থেকেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্বাভাবিকরকম উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থার বিপরীতে অবস্থানগ্রহণÑ আওয়ামীলীগের জনপ্রিয়তায় মারাত্মক পর্যায়ের হ্রাস ঘটায়। এহেন প্রেক্ষিতে সরকারের সামনে এখন আর মেকানিজম ও ইঞ্জিনিয়ারিং করা ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে কোনো ভালো ফল করার আশা নেই। তাই পক্ষপাতমূলক একটি জাতীয় নির্বাচনকেই সরকার এখন একমাত্র অবলম্বন মনে করতে চাইছে। এই প্রেক্ষিতে আমরা তাদেরকে বিএনপির পরিণাম থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহবান জানাতে পারি। আর বলতে পারি, মহান কুদরতের মালিক আল্লাহ তাআলার পাকড়াওয়ের ব্যপারে মানুষের কোনো পূর্বধারণাই থাকে না। শাশ্বত আল কোরআনুল কারিম বলছে- ‘অত:পর আল্লাহ তাদের ওপর এমনভাবে আপতিত হলেন যে- তাদের কল্পনাতেও ছিলো না।’
(সুরা আল হাশর-২)